অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনী মূলক রচনা
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় :– একাধারে নাট্যরচনা , নাট্যভিনয় এবং অন্যদিকে নাট্য প্রযোজনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে যে মুষ্টিমেয় কোয়েক জন তাদের সৃজন শিল প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন , অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের মধ্যে অন্যতম । ১৯৩৩ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর বর্ধমান জেলার আসানসোলের কাছে রোপো গ্রামে তার জন্ম হয় । তার পিতার নাম ভুবন মোহন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা লক্ষীরানী বন্দ্যোপাধ্যায় ।
ছাত্রজীবন :– অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শৈশব ও কৈশোরের পড়াশোনা কুলটি হাই স্কুলে । এ খান ম্যাট্রিক পাস করার পর বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে তিনি আই এস সি পাশ করেন । এরপর কলকাতার মনীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ইংরেজীতে স্নাতক হন ।
কর্মজীবন :– পড়াশোনা সমাপ্ত করে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন । প্রথম দমদমের মতিলাল বিদ্যায়তনে এবং পরে বাগুই আটির হিন্দু বিদ্যাপিঠে শিক্ষতা করেছেন তিনি ।
নাট্যজীবন :– মনীন্দ্রচন্দ্র কলেজেরই দেওয়াল পত্রিকা " খসড়া " কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল " খসড়া সংস্কৃতি পরিষদ " । এই পরিষদ থেকেই মঞ্চস্থ হয় চিত্র রঞ্জন ঘোষের নাটক " দাও ফিরে এসে অরণ্য " । এরপর ১৯৬০ সালে ২৯ জুন " নান্দিকার " নাট্য গোষ্ঠী তৈরীর মধ্যে দিয়ে নাটকের সঙ্গে তার পথ চলার সূচনা হয় ।
[ ] আজিতেশের নাট্য রচনা মূলত অভিনয়ের প্রয়োজনে , কিন্তু একইসঙ্গে সেসব নাটক শিল্পশার্থক ও । তার সামগ্রীক নাট্য সৃষ্টিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় – মৌলিক নাটক এবং রূপান্তরিত নাটক । সাঁওতাল বিদ্রোহ , সেতুবন্ধন , এবং সওদাগরের নৌকো , অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৌলিক নাট্যসৃষ্টি । এক দশকের বেশি সময় ধরে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি । গণ্য নাট্য সঙ্ঘের সক্রিয় সদস্যও ছিলেন তিনি । পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকেই অজিতেশ যুক্ত হয়ে পড়েন শ্রমিক , শিক্ষক , উদবাস্তু আন্দোলনে । গণ নাট্য সংঘের জন্যই তিনি আরও রচনা করেছিলেন " ধর্মঘট " , কয়লার রং , সাঁওতাল বিদ্রোহ নাটক গুলি । কিন্তু ১৯৬৪ সালে মতাদর্শগত বিরোধ এবং স্বাধীনভাবে ভালো নাটক করার ইচ্ছা নিয়ে তিনি গণ্যনাট্যর সঙ্গে গাঁটছড়া ছিড়ে ফেলেন । অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাট্যকৃতির একটা বড়ো অংশ জুড়ে আছে তার রূপান্তরিত নাটক ।
চলচ্চিত্র :– নাটক অজিতেশের প্রথম পছন্দ হলেও বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন । যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – আরোহী , ছুটি , হাটে বাজারে , কলকাতা ৭১ , এবং হিন্দি ছবি এক আধুরি কাহানী , সমঝওতা, আঞ্জানে মেহমান । অল্প কিছু দিনের জন্য অজিতেশ যাত্রাতেও অভিনয় করেছিলেন ।
নান্দিমুখ গঠন :– ১৯৭৭ সালে ৭ সেপ্টেম্বর অজিতেশ তারই প্রতিষ্ঠিত নান্দিকার ছেড়ে দেন , আর ওই বছরই ৯ সেপ্টেম্বর তৈরী করেন তার নতুন নাটকের দল " নান্দিমুখ " । নাটকের জন্যই অজিতেশ তার শিক্ষতার চাকরী ছেড়ে দিয়েছিলেন । সারাজীবন সেই নাটকের জন্যই উৎসর্গ করেছেন নিজেকে । নাটক যেন তার কাছে জীবন সংগ্রামের প্রতিরূপ হয়ে ওঠেছিল ।
সম্মান ও স্বীকৃতি :– ১৯৭৬ সালে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ " সংগীত নাটক একাডেমী " পুরষ্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয় ।
নান্দিমুখ গঠন :– ১৯৭৭ সালে ৭ সেপ্টেম্বর অজিতেশ তারই প্রতিষ্ঠিত নান্দিকার ছেড়ে দেন , আর ওই বছরই ৯ সেপ্টেম্বর তৈরী করেন তার নতুন নাটকের দল " নান্দিমুখ " । নাটকের জন্যই অজিতেশ তার শিক্ষতার চাকরী ছেড়ে দিয়েছিলেন । সারাজীবন সেই নাটকের জন্যই উৎসর্গ করেছেন নিজেকে । নাটক যেন তার কাছে জীবন সংগ্রামের প্রতিরূপ হয়ে ওঠেছিল ।
সম্মান ও স্বীকৃতি :– ১৯৭৬ সালে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ " সংগীত নাটক একাডেমী " পুরষ্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয় ।
জীবনাবসান :– ১৯৮৩ সালে ১৪ অক্টোবর মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে এই প্রবাদ প্রতিম নাট্য শিল্পীর প্রয়ান ঘটে ।
No comments