জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় :– প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ১৯২৬ খিস্টাবদে ১৪ জনুয়ারি অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা শহরে । তার বাবা ছিলেন যুব নাশম্ম ছদ্মনাম গ্রহণকারী বিশিষ্ট কবি এবং সনামাধন্য গদ্যকার মণীশ ঘটক , মা ধরিত্রী দেবী । বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক ছিলেন তার কাকা । " নবান্ন " খ্যাত প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব বিজন ভট্টাচাযের সঙ্গে মহাশ্বেতা দেবীর বিবাহ হয় । সাহিত্যিক সাংবাদিক নবারুণ ভট্টাচায তাদের একমাত্র সন্তান ।
শিক্ষাজীবন :– মহাশ্বেতা দেবীর শিক্ষা শুরু হয় রাজশাহীতে । পরবর্তী কালে কলকাতার আশুতোষ কলেজ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন । কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য
স্নাকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ।
কর্মজীবন :– অবসরের আগে নানা প্রকার পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি । স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন , কলেজে অধ্যাপনা করেছেন ,
পত্র পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন । সাংবাদিক জীবনে তিনি " যুগান্তর " পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । ১৯৮০ খিস্টাবদে থেকে সাহিত্যরচনাই তার একমাত্র পেশা হয়ে দাড়ায় ।
সমাজসেবা ও রাজনীতি :– মহাশ্বেতা দেবী সমাজসেবী এবং রাজনীতিবিদ হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন । বাবা ও কাকার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি যৌবন থেকেই বামপন্থি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়েন । বৈপ্লবিক চিন্তা ধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তার রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্র ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে – গঞ্জে । শবর , খেরিয়া ইত্যাদি অরন্যচারি উপজাতির উন্নয়নে তিনি নিজেকে সপে দেন । ভারতের বিভিন্ন উপজাতি অঞ্চলেও তার কর্মধারা প্রসারিত হয়েছে । সমাজসেবা এবং রাজনীতির এই বিপুল অভিজ্ঞতার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় তার সাহিত্যকর্মে ।
সাহিত্যকর্ম :– মহাশ্বেতা দেবীর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ইতিহাসনির্ভর জীবনী " ঝাঁসির রানী " । তার প্রথম উপন্যাস " নটি " । তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো " মধুর প্রেম " ,"রুদালি " , " প্রেমতারা ", " হাজার চুরাশির মা ", অরন্যের অধিকার ", গণেশ মহিমা , বিশ একুশ , ইত্যাদি । সমাজের তথাকথিত নিম্নবিত্ত ও নিম্নবর্গের মানুষের জীবন যাপন এবং তাদের আশা , হতাশা , স্বপ্ন , সংগ্রামের সংবেদনশীল এবং প্রতিবাদী রূপ উঠে এসেছে তার সাহিত্য – সৃষ্টিতে । অধিবাসী এবং সমাজের অন্যান্য সর্বহারা মানুষের জীবনের উন্নয়নে যেমন তিনি ব্রতী হয়েছেন , তেমনি তাদের জীবনকথা নিয়েই তিনি শিল্পসার্থক ছোটগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন । মহাশ্বেতা দেবী " বর্তিকা " নামক একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন ।
সম্মান ও স্বীকৃতি :– মহাশ্বেতা দেবী তার নিরলস সাংবাদিকতা এবং সাহিত্য সাধনার জন্য বহু পুরস্কারের ভূষিত হয়েছেন । তিনি ১৯৮৬ খিস্টাবদে একাডেমী পুরস্কারে এবং ১৯৯৬ খিস্টাবদে ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন । এছাড়াও তিনি " পদ্মশ্রী " , " দেশিকোওম " , প্রভুতি উপাধিও লাভ করেছেন । তবে নিছক পুরস্কার প্রাপ্তির মানদন্ডেই তার কর্মময় জীবন এবং সৃজশীল অবদানের মূল্যায়ণ করা যায় না ।
জীবনবাসান :– ২৮ জুলাই ২০১৬ ( ৯০ ) বয়সে মৃত্যু হয় । পশ্চিমবঙ্গ ।
মহাশ্বেতা দেবী জীবনীমূলক রচনা
Reviewed by Admin
on
September 14, 2024
Rating: 5
No comments