বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রে তপন সিংহের অবদান আলোচনা করো | Tapan Singher Obodan
প্রশ্ন :- বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রে তপন সিংহের অবদান আলোচনা করো ।
উত্তর : বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রে সুবর্ন রথের এক বর্ণময় সারথী তপন সিংহ । তিনি বহু আলোচিত , কিন্তু অনালোকিত । আসলে তপন সিংহ কে দেখার চোখ সেদিনের শিল্প বোদ্ধা দের ছিল না । কারণ , আমাদের শিল্প বোদ্ধ যেমন এক দেশ দশী , তেমনি যুক্তি ও শৃঙ্খলার । তাই তপন সিংহের মতো শিল্পীও আমাদের বিচারে গৌণ , অকিঞ্চিৎকর হয়ে পড়েছিলেন ।
[ ] ছাত্রবস্থা থেকেই দেশ বিদেশের চলচ্চিত্র ভক্ত তপন সিংহ । জীবনের প্রথম পর্বেই শিক্ষানবিশ হিসেবে পেয়েছিলেন বাণী দত্ত এবং বিমল রায়ের মতো পরিচালকের দীক্ষা তারপর লাভ করেছিলেন বিশ্বখ্যাত পরিচালক জা রেনোয়ার সান্নিধ্য । তারপর " ক্যালকাটা মুভি টোন " এ শব্দ যন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে করতে লোগুন যাত্রা । সেখানে " সাউন্ড এফেকশন " নিয়ে ডিগ্রী লাভ করে চার্লস ক্রাইটনের সহকারী হওয়ার দুর্লভ সুযোগ লাভ । অন্তঃপর দেশে ফিরে আসা । এ খানে এসে " সৈনিক " নামের বিখ্যাত ছোটো গল্প নিয়ে তৈরী করেন প্রথম সিনেমা " অঙ্কুশ" । কিন্তু সিনেমাটি চূড়ান্ত ব্যর্থ হয় । কটূক্তি , বাঙ্গণতক সমালোচনায় তপন সিংহ মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন । তারপর রবীন্দ্রভক্ত হিসেবে তিনি রবীন্দ্রনাথের আশ্রয় নেন । আর এই পথেই আসে সাফল্য । তার দ্বিতীয় সিনেমা " কাবুলিওয়ালা " দারুন ভাবে শুধু বাণিজ্য - সফলই হয় না । রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার এবং বার্লিন চলচ্চিত্রও পুরষ্কার লাভ করে । এরপর তিনি সিনেমার জগতে তৈরী করে ফেলেন নিজস্ব পরিচিতি ।
সতীর্থ সত্যজিৎ এবং হাদ্র ঋত্বিকের সঙ্গে তাঁর চলচ্চিত্র ভাবনার প্রধান পার্থক্য এই যে , তিনি নব্য তার ভাষা ও পরিশীলিত শিল্প টেকনিকের সঙ্গে এক পেশে আপস না করে এক অভিনব বিবর্তন রেখা অঙ্কন করতে চান । তিনি আজীবন বিশ্বাস করেছেন যে , সিনেমা যেহেতু একটা বাণিজ্য ব্যাবস্থা , তাই তাকে যদি সুন্দরের অভিযানে যেতেও হয় তবে সেই অভিযান কে বানিজ্য সমথিত হতেই হবে । যদি সিনেমা স্বয়ং শাসিত হয় ও , তবু তাকে গল্পের উপর নির্ভরশীল থেকে যেতে হবে । তবে সেই গল্প বলা হলিউডি মার্কা হবে না তা হবে আমাদের কথকতার ধরনের । তপন সিংহের ধারণা ছিল ছবির কোনো অধিকার ই নেই বিমূর্ত হওয়ার তাকে আলো শব্দ চিত্র দিয়ে বিচিত্র স্বাদের গল্প বুনে যেতে হবে । আসলে তপন সিংহের মধ্যে ছিল স্বদেশ্চিয়ানা বা বাঙালিয়ানার বিস্তৃত মনো পরিসর । তাই যে মধ্যবিত্ত দারিদ্র্য দু:খ চেনে অথচ দিন্তামুক্ত , যে মধ্যবিত্ত শব্দের সোজন্য হৃদয়ের উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য আকুল - তপন সিংহ তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করেন । তাই তো সৃষ্টি হয় " কাবুলিওয়ালা " " নির্জন সৈকতে" " হারমোনিয়াম " " গল্প হলেও সত্যি " " সাগিনা মাহাতো ' " সবুজ দ্বীপের রাজা " ইত্যাদি সিনেমা ।
এই সিনেমা গুলি থেকেই বোঝা যায় তিনি মধ্যে সিনেমার পর্থিক নন বরং আমাদের ঐতিহ্য । মূল কাহিনী পর্থের ই এক সফল পদাতিক মধ্যপন্থী নন , বরং একটি সম্মাবস্থা তার শিল্পরা কথা বলে , কিন্তু কোলাহল করে না , তার চরিত্ররা সংলাপমুখোর ,
এ রকম অপ্রত্যাশিত কাহিনী নির্বাচন কে স্বা ভাবিক প্রত্যাশার মধ্যে বুনে দেওয়া যে কত বড়ো কৃতিত্ব তা আজ বাংলা ছবির পতিত ।
No comments